বুলেটেশ্বরের আখ্যান
তন্ময় চক্রবর্তী
কুসংস্কার ভারতীয় সমাজের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। অন্ধ বিশ্বাসের যাঁতাকলে পড়ে যেমন বহু মানুষের সর্বনাশ হয়েছে‚ ঠিক তেমনই রাতারাতি অনেক ঠক জোচ্চোর জীবৎকালেই দেবতাসম ভক্তির পাত্র হয়েছে।
তবে এখন যে গল্পটা শোনাতে চলেছি তার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি না থাকলেও তা মানব মনে এক কৌতুক মিশ্রিত বিস্ময়ের উদ্রেক ঘটাবে নিশ্চয়ই।
যোধপুর থেকে উদয়পুর এর দিকে যাত্রা শুরু করেছি সকাল আটটায়। স্বভাবতই
কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই ক্ষুধার্ত।
আমাদের গাড়ির চালক গিরিধারীজিকে সে কথা জানাতেই যোধপুর থেকে মোটামুটি ৫০ কিলোমিটার দূরে এসে হাইওয়ের পাশে একটি ধাবার সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়ে তিনি বললেন- ''খাবারের অর্ডারটা করে দিয়ে রাস্তাটা পার করে ওই দিকে যান‚ দেখবেন একটা মন্দিরে পুজো হচ্ছে ‚ মজাটা দেখে আসুন।''
ব্যস্ত সমস্ত জাতীয় সড়ক পার করে ওদিকে গিয়ে যা দেখলাম ‚তা কতকটা এরকম।
হ্যাঁ সেখানে যজ্ঞ হচ্ছে‚ ধুনো-ধূপকাঠি সবই যথাযথ ‚ কিন্তু মানুষ প্রণাম করছে এক যুবকের ফ্রেম করা ছবি এবং একটি 350cc রয়াল এনফিল্ড বুলেট মোটরসাইকেলকে। হতবাক?
তবে শুনুন এর ইতিহাস।
আজ থেকে দু দশক আগে স্থানীয় গ্রামের নেতার পুত্র ওম সিং রাঠোর মদ্যপান করে তার বুলেট টি চালিয়ে বাড়ি ফেরার সময় এক দুর্ঘটনায় মারা যান।
পুলিশ পরদিন সকালে সেখানে গিয়ে মোটরসাইকেলটি নিয়ে চলে আসে স্থানীয় থানায় ‚কিন্তু পরদিন সকালে এসে দেখা যায় বুলেটটি থানায় নেই। খোঁজাখুঁজির পর সেটি আবার পাওয়া যায় ওই দুর্ঘটনা স্থলেই।
কোন এক কৌতুকপ্রিয় যুবকের কাণ্ড ভেবে পুলিশ আবার নিয়ে আসে
সেটিকে থানায়। এবার একেবারে বাইকটির তেলের ট্যাংক খালি করে চেন লাগিয়ে পাহারায় রেখে দেওয়া হয় বাহনটিকে। কিন্তু পরদিন সকালে আবার বুলেটেশ্বরের আবির্ভাব হয় ওই একই জায়গায়। ফলতঃ আজ ঐ একই স্থানে 'ওম বন্নাহ' অধিষ্ঠান।
জানি বহিরাগত হয়ে এমন ঘটনা আমাদের কাছে সাজানো বলেই মনে হবে‚ কিন্তু স্থানীয় মানুষদের ভক্তির প্রাবল্য দেখে সত্যিই বিস্মিত হতে হয়। তাদের বিশ্বাস ওই রাস্তায় চলা যাবতীয় যানবাহন ও মানুষের রক্ষাকর্তা 'ওম বান্নাহ বা বুলেট বাবা' ।
অবাক হবার শেষ এখানেই নয়‚ স্থানীয়দের মনস্কামনা পূরণ হলে ওই মন্দিরে তারা প্রসাদ হিসেবে দিয়ে থাকে whiskey কিংবা rum এর বোতল। আবার ওই রঙিন পানীয়ই আহুতি দেয় যজ্ঞের আগুনে । নতুন গাড়ি কিনে তার পুজো দেওয়া থেকে শুরু করে দীর্ঘ পথযাত্রায় বেরিয়ে পড়া স্বামীর মঙ্গল কামনায় স্ত্রী এর 'ওম বন্নাহর' প্রতি এই বিশ্বাস এবং ভক্তি যেন Incredible india -র মুকুটে সত্যিই এক পালক যোগ করে।
মৃত্যুর পরে নিজের স্বাধের দু-চাকার কৃপায় ঈশ্বরত্ব লাভের এই ঘটনা সত্যিই অভিনব। এই ঘটনা জানার পর ভ্রমণপিপাসু ভারতীয় যদি নতুন বছর এ নতুন গন্তব্যের দিক এ পা বাড়ানোর আগে যদি মনে মনে এক - দুবার জয় 'ওম বন্নাহ' আওড়ে নেয়‚ তাতে লজ্জার কিছু নেই।ভুলে যাবেন না।
'বিশ্বাস এ মিলায় বস্তু ‚ তর্কে বহুদূর'