ম্যাক্লস্কিগঞ্জ-রাঁচী, ঝাড়খণ্ড - সবুজের মাঝে প্রকৃতির কাছাকাছি
Updated 1 September 2019
সাল টা তখন ১৯৩৩, Pakistan বলে একটা নতুন দেশ তৈরি হবে দেশ ভাগের পর সেটা ভারতীয়দের কাছে প্রকাশিত। অপর দিকে গান্ধী জি অনশন গ্রহন করেছেন নিচু জাতের মানুষের সমান অধিকারের জন্য।
এই রকম অরাজক পরিবেশের মধ্যে যখন ভারতবাসী ইংরেজ প্রতি প্রতিহিংসাপরায়ণ, কলকাতার একজন ব্যাবসায়ী Timothy McCluskie আজকের ঝাড়খন্ডে সবুজে ঘেরা শান্ত নিরিবিলি পরিবেশে Anglo-Indian দের জন্য বসবাসের সুযোগ করে দেন।
নামও হয় ওনার নাম অনুসারে McCluskiegunj, অন্যতম Weekend destination কলকাতা থেকে।
পুরনো এই বাংলো আর প্রকৃতির টানে একখানা উইকেন্ড ট্রিপ সেড়ে এলাম McCluskiegunj। জঙ্গলে ঘেরা এই গ্রামটি রাঁচি স্টেশন থেকে মাত্র ৭০ কিলোমিটার দূরে।
রাতে ট্রেনে চেপে পরদিন সকালে আমরা পৌছালাম রাঁচি। সেখানে আমাদের জন্য গাড়ি অপেক্ষা করছিল, আমরা যে গেস্ট হাউসে ছিলাম তারাই গাড়ি ব্যবস্থা করে দিয়েছিল।
রাঁচি থেকে সকালবেলা ফাঁকা রাস্তায় McCluskiegunj পৌঁছাতে আমাদের লাগলো প্রায় ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট।
এত সবুজ আমরা কলকাতা শহর ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে দেখতে পাইনা। রাস্তাটি অত্যন্ত সুন্দর এবং ছবির মত। দুধারে সবুজ গাছের সারি চোখে শান্তি দেয়। গাড়িতে AC দরকার ছিল না, জানলা খুলে দিয়ে প্রাণভরে প্রকৃত স্বাদ নিতে নিতে পৌছালাম।
ঝারখান্ড ট্যুরিজমের গেস্ট হাউজ, Dream Destination - সেখানেই আমরা ছিলাম এছাড়াও আরও তিনটি গেস্টহাউজ আছে।
গেস্ট হাউসের ম্যানেজার বাবু আমাদের আশেপাশে ঘুরে দেখার সমস্ত জায়গা বলে দিয়েছিলেন।
সেই মতই আমরা জলখাবার সেরে আমরা আশেপাশে ঘুরে দেখলাম চটি নদী, সীতাকুণ্ড, ধর্মস্থল, দামোদর নদ, জাগৃতি বিহার্।
Timothy বাবু যে খুব যত্ন করে গ্রামটি তৈরি করেছিলেন তার ছাপ এখানে এখনো সুস্পষ্ট।
গ্রাম হলেও বাড়িঘর সমস্তই পাকা, নেটওয়ার্কের কোন সমস্যা নেই 4G পাওয়া যায়। লোকাল মানুষজন অটোর উপরেই ভরসা করে থাকে।
তবে ইলেকট্রিসিটির একটু অসুবিধা এখানে আছে। কিছুক্ষণ অন্তর অন্তর বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হতে থাকে। চিন্তার কিছু নেই জেনারেটর এবং ইনভার্টার প্রায় সব বাড়িতে এবং গেস্ট হাউসে আছে।
বর্ষার মধ্যে গেছিলাম বলে সবুজের কোন অভাব চোখে পড়েনি। আর জঙ্গলে এক ধরনের মাশরুম জন্মায় যেটা টেস্ট করার সুযোগ হয়েছিল।আমরা যে মাশরুম খেয়ে অভ্যস্ত সেরকম না, রান্নার ধরনটাও আলাদা।
জায়গাটি অত্যন্ত নিস্তব্ধ এবং নিরিবিলি তাই রাত খুব তাড়াতাড়ি নেমে আসে এবং সন্ধ্যার পর থেকে কিছুই তেমন করার থাকেনা। বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সাথে গেলে সময় কাটানোর একদম সঠিক জায়গা।
সন্ধ্যাবেলায় দামোদর নদের তীরে সূর্যাস্ত দেখে আর বন্ধুদের সাথে গল্প করতে করতেই সময় কেটে গেল।
ছোটনাগপুর মালভূমির অন্তর্গত হওয়ার দরুন পরিবেশ বর্ষা এবং শীতকালে বেশ মনোরম এখানে এবং উপযুক্ত সময় বেড়াতে আসার জন্য
ছোট গ্রাম, তাই কোন বড় হোটেল বা রেস্টুরেন্টের আশা করাটাই বৃথা।
কিন্তু আমাদের গেস্ট হাউজের রাধুনী দ্বারীকা বাবু অসাধারণ দেশী মাংসের ঝোল, আলু ভাজা ভাত, আর সবজি খাইয়ে আমাদের খাবারের লোভটা মিটিয়েছিলেন।
আমাদের হাতে আরও একটি দিন সময় ছিল, তাই রাঁচী শহরটা ঘুরে দেখব ঠিক করলাম। যেমন কথা তেমন কাজ।
ম্যাক্লস্কিগঞ্জ থেকে বেরিয়ে আমরা পৌঁছে গেলাম রাঁচী। শহরটি বেশ সাজানো গোছানো এবং পরিষ্কার। শহরের মধ্যেই আছে কাঁকী বাঁধ এবং রক গার্ডেন। বিকেল বেলা করে লোকজন পরিবার এবং বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সেখানে সময় কাটায়।
আমাদের ট্রেন রাতে ছিল তাই দিনের বেলা আমরা দেখতে গেলাম জোনাহ ফলস, হুড্রু ফলস, সীতা ফলস।
জোনাহ ফলস-এ আমাদের অনেকটা সময় কেটে গেল। এখানে ঝর্নাতে স্নান করা যায়, অনেকের মত আমরাও সাহস করে নেমে পড়লাম।
স্নান করতে নেমে যে আমরা দু'ঘন্টা মুহুর্তের মত কাটিয়ে ফেলব সেটা প্রথমে বুঝতে পারিনি।নিঃসন্দেহে, অমন পাগলপারা ঝর্না কেবল তার সৌন্দর্যেই মন ভেজাতে পারে আমার এমন ধারনা ভীষণ ভুল ছিল। অগত্যা সময়জ্ঞান হওয়াতে আমরা ফিরে এলাম - বলা ভাল ফিরতে হল।
ঝর্নাস্নানের রেশ মনে মেখে ফিরতেই শুরু করেছিলাম, হঠাৎ খেয়াল করলাম, খুব খিদে পেয়েছে। এতক্ষণ খেয়াল হয়নি - ফেরার পথে সারি দিয়ে বসে থাকা খাবারের দোকানের দেখা পেতেই মনোযোগ ঘুরল।
আমরা মুরগীর মাংস আর ভাত অর্ডার করে গিয়েছিলাম (ভাগ্যিস!)। এমন সুতীব্র খিদের সৎ-আয়োজনে বিরতি দেবার আর কোনও কারনই ছিলনা।
5 টার পর দর্শনার্থীদের অনুমতি নেই ঝর্না গুলিতে যাবার
টিকিট 20 টাকা
যদি জঙ্গল ভালো লাগে এবং এর সাথে পুরনো বাংলোর উপর আকর্ষণ থাকে তাহলে ম্যাক্লস্কিগঞ্জ তাদের জন্য একদম সঠিক ঠিকানা। আর তার সাথে উপরিপাওনা হতেই পারে ফেরার পথের এই ফলসগুলির স্ফটিক-স্বচ্ছ মুগ্ধতা।
থাকার জায়গা এবং খরচাপাতি
Gordon's গেস্ট হাউস - 098357 70679
Amyra গেস্টহাউস - 094319 01590 (নতুন কাজ চলছে)
Dream Destination - 09431114028
গুলমোহর গেস্ট হাউস - 07033546333 (এটি ,সেখর বোষের বাড়ির কাছে)
Rana's Country Cottage - 9006205320
রাঁচি স্টেশন থেকে রাঁচি স্টেশন গাড়ি ভাড়া 3000 টাকা। গাড়ি ভাড়া আপনি যত ভালো নেগোশিয়েট করতে পারবেন ততো ভালো।
লোকাল অটো করে যদি ঘুরতে চান গ্রামের মধ্যে 700 থেকে 1000 টাকা ,দরাদরি নিশ্চয়ই করবেন।
খাওয়া-দাওয়া :
দেশি মুরগির মাংস ভাত আলু ভাজা 400 টাকা
সবজি ভাত ডিম ভাজা ২৫০ টাকা
জলখাবার রুটি সবজি ডিম ভাজা 200 টাকা
নন AC রুম 1250
AC রুম 2500 (4bed), 1600 (2 bed)
গ্রামটিতে কোন এটিএম এর সুবিধা নেই তাই যথাযথ ক্যাশ নিয়ে যাওয়াটাই বাঞ্ছনীয়।
আপনাদের যদি কোন কোন প্রশ্ন অথবা তথ্য শেয়ার করার থাকে নিশ্চয়ই কমেন্ট করে জানাবেন।
আরো বিভিন্ন ভ্রমণ সংক্রান্ত তথ্য জানতে হলে নিশ্চয়ই আমাদের Facebook কমিউনিটি পেজে জয়েন করুন।